“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৪

'তবু কিছু থাকবে…'


।। সৌম্য শর্মা ।।






বু কিছু থাকবে কোথাও
সে বিকেল ছিল শান্ত,  গভীর
সমাহিত আপন সততায়
ছিলো  ভালোলাগা কিছু ক্ষণ
ভিতরে কাঁপতে থাকা দুটি হৃদয়
' ভালোবাসি' __ তবু কেউ বলিনি তখন
মূক  পৃথিবীর ভাষা হয়েছিলো সংগীত
সে বিকেল, নিজেদের হঠাৎ সে চেনা…
ব্যসত জীবনের ফাঁকে, নিঃশব্দ  হাওয়ায়
রাতের চাঁদ যেমন দিনের আলোয়
গভীর, গোপন যক্ষের  ধন……

তবু, কিছু  থাকবে কোথাও………


বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৪

প্রক্ষালন

(C)Image : ছবি


























।। দেবলীনা সেনগুপ্ত।।

সুদীর্ঘ জীবন যদি
পেতে চাও হে মানব,
ঋণ  শোধ কর
নদী ও নারীর কাছে
পাপ-দাগ ধুয়ে ফেলে
নদীজলে,
ফিরে যাও নিজস্ব
নারীর পাশে
নতশিরে
উদাত্ত আদরে ভর
মানবীর প্রাণ
আত্মার ক্লান্তি মুছে
নদীতীরেই বাঁধো ঘর
তৃণসম্বলে
সপ্রেম তৃষায়
একদিন
ইতিহাস হবে বলে

দৈনন্দিন






















।। সৌম্য শর্মা।।


দিনের পর দিন
বছরের পর বছর
আসে, যায়, … আবারও  আসে…

সুখ, দুঃখ  পাশাপাশি
বিশ্বাস  আর অবিশ্বাস
সপন আর বাস্তব
শুধু   ভাঙা - গড়া  খেলা  অবিরাম……

পাগ ঐতিহাসিক  আমার  লাশ
ভেসে যায়  আদিমতার স্রোতে ………

রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪

এখানে সবই শত্রু





।।শৈলেন দাস।।

খানে সবই শত্রু
জল বায়ু মাটি আমার বেঁচে থাকার উপাদান।
প্রভাবী কারকগুলি এতই প্রকট যে
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে সেই কাঠামো
যেখানে আমার অবস্থান।।

রাত জাগার কথা























।।শৈলেন দাস।।

এখন আর সময় কাটেনা
রাত জাগার কথাটুকু রাখি-
মশারি টাঙ্গানো বিছানায় বসে
সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ি
কুণ্ডলী পাকিয়ে দু:খরা বের হয়
মনের রিংটোন সাইলেন্ট রাখি।
তুমি তো বুঝনা, বুঝবেও না
আমার ঘুমহীন চোখের শীতল চাহনি
পূর্ণ একটি অবয়ব খুঁজে আধাঁরে
যা হবে শুধু তোমারই।
ছোঁয়ার আশায় হাত বাড়িয়ে
ফুঁফিয়ে উঠি অশান্ত, অস্থির আমি
বুঝিনা, বুঝতেও চাইনা
তুমি যে নও আমার-ই।

নক্ষত্র
























।।শৈলেন দাস।।

ও চাঁদ, তুমি কিছুটা স্তিমিত হও নয়তো চলে যাও মেঘের আড়ালে...
বছর শেষের এই মধ্য যামিনীতে আমি কিছুক্ষণ খুঁজে নিই
বিস্তৃত আকাশের বুকে
আমার জীবন থেকে খসে পড়া নক্ষত্রটাকে।।

আমি হারিয়ে যাব


























।।শৈলেন দাস।।

আমি হারিয়ে যাব
হারিয়ে যাব কোথাও দূরের দুনিয়ায়
তুমি আর পিছনে ফিরে থাকিও না
চলে যাও সুরম্য বাতানুকুল রুমে
আমার শার্টের বোতাম থাক না খোলা
জীবন ভিজে গেছে ঘামে

অফুরান সুখের জোয়ার



।।শৈলেন দাস।।

(C)Image:ছবি
























তোমার পবিত্রতা ঈশ্বরতুল্য
আমার আরাধ্য চিরদিনের
কষ্ট কষ্ট, সুখ সুখ এই জীবনে
যা কিছু শ্রেষ্ঠ, সুন্দর
তুলে রেখেছি তোমার সমর্পণে।
বিরহের আগুনে পুড়ে ছারখার
বেপথু হলেও আমি
হৃদয়ে ফুটিয়েছি তোমার জন্য
রাশি রাশি রক্ত গোলাপ।
যদি পার তুমি এস ফিরে
বিষাদময় জীবনে আমার
দু:খরা পালিয়ে যাবে
অফুরান সুখের আসবে জোয়ার।

মনের মৃত্যু




।।শৈলেন দাস।।

শেষ ডিসেম্বরের রাত। শীত ঝাঁকিয়ে বসেছে। শিশিরের ছোঁয়ায় সবকিছু ভেজা ভেজা। চাঁদটাও যেন একটু কুঁড়ে হয়ে গেছে নয়ত সাড়ে সাতটার পরও গায়ে আঁধার জড়িয়ে থাকবে কেন? গুয়াহাটীর অফিস থেকে সন্ধ্যা পাঁচটায় মোবাইলে জরুরী মেসেজ পেয়ে ছুটে এসেছি শিলচর আইএসবিটি-তে। চলতি মাসের ব্যবসা সম্পর্কিত কাগজ-পত্র নিতে ঘরে যাওয়াতেই এত দেরী, অথচ মাকেও জানানো হয়নি ভাল করে। কাল দশটায় মিটিং-এ উপস্থিত না হতে পারলে উর্ধ্বতন কর্তার রোষানলে পড়ব, ছাটাইও হয়ে যেতে পারি চাকরি থেকে। টিকিটের অগ্রীম বুকিং ছিলনা। তাছাড়া পৌঁছতে পৌঁছতে সব কয়টি গাড়িও ছেড়ে দিয়েছে। টিকিট কাউণ্টার থেকে জানতে পেরেছি শুধু একটি গাড়িই বাকি রয়েছে তবে তা ঢুকবেনা আইএসবিটি-তে। তাই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি, যেতে হবেই কোন মতে। এদিকে তাড়াহুরা করে বেরিয়ে পড়ায় গরম কাপড়ও নিয়ে আসিনি। হাফ হাতা শার্টের উপর শুধু একটি হাফ সুয়েটার। ঠাণ্ডায় কাঁপছি তবু নিরুপায়, গাড়িটি মিস করা যাবেনা যে! বাস এসেছে প্রায় এক ঘণ্টা পরে। পেছনের একটা সীট পেয়েগেছি বরাত জোরে। পাশের সীটে একজন মেয়েমানুষ। আলো কম থাকায় ভাল করে দেখতে পারিনি তাকে তাছাড়া সংকোচও হচ্ছিল তাকাতে। এদিকে ঠাণ্ডা কাবু করে ফেলেছে আমাকে, গা গুলানো ভাব। মাথাটাও ঝিমঝিম করছে। জানালার পাশে কোরকম বসেছি দাঁতে দাঁত চেপে।
         গাড়ি ছুটছে। শিলং এর পাহাড়ি এলাকায় ঢুকে গাড়ি যেই দ্রুত বাঁক নিয়েছে আর সামলাতে পারিনি নিজেকে। হরহর করে বমি করলাম জানালা খুলে। তারপর সব অন্ধকার। বলতে পারব না জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম না ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মাঝপথে। যখন হুঁশ ফিরল বাস ততক্ষণে গিয়ে থেমেছে খানাপাড়া এলাকায়, গুয়াহাটির যেখানে অধিকাংশ যাত্রীরা নেমে পড়ে। চেয়ে দেখি বাসের সবাই নেমে গেছে, মেয়েটিও নেই। আমার গায়ে ফুলের নক্সা করা একটি মেয়েদের চাদর আবিষ্কার করে তাড়াতাড়ি নামলাম বাস থেকে। যার সহনুভূতির কারণে শীতের রাতেও আমাকে জড়িয়ে রেখেছিল ছিল উষ্ঞতা তাকে কৃতজ্ঞতা না জানালে বিবেক বলে কিছু থাকবেনা যে।
             যাত্রীরা যে যার গন্তব্যে রওয়ানা দিচ্ছে। কয়েকজন মেয়েকে দেখলাম পরিবারের লোকেজনের সাথে। একজন যুবতীই কেবল নিজের মালপত্র নিয়ে একা দাঁড়িয়ে। দ্বিধা ও সংকোচ কাটিয়ে জিজ্ঞেস করতে যাব যে সে-ই আমার সহযাত্রী ছিল কিনা, চাদড়টা কি সে্-ই আমাকে দিয়েছে? হঠাৎ একটি গাড়ি এসে থামল আমার সামনে। জানলার কাঁচ নামিয়ে অতি পরিচিত একখানা মুখ, যা সেই কৈশোর থেকে গেঁথে আছে মনে। বলল- আপনি কি এখন ভাল আছেন? ‘আপনি’ বলায় ঝাঁকুনি একটু লাগল হৃদযন্ত্রে। হাতের শিরাগুলিতে শ্লথ হল রক্তের চলাচল। বিহ্বলতা কাটিয়ে কিছু বলব সে হুঁশ আমার কই! শুধু একবার এবং একবারই এক মূহূর্তের জন্য ঠোঁট দুটি কাঁপল আবেগে। জানি না সে কি ভাবল। কিছুক্ষণ উত্তর না পেয়ে চলে গেল গাড়ি করে।

       মনে করার চেষ্টা করলাম আমি এত সহজে ভূলার পাত্র হয়ে গেলাম কি করে? কৈশোরের কোন কৃতিত্বের ছাপই থাকল না কারো মনে।

চাতলা হাওরের জনজীবন ও শিক্ষা





।।রেবতী মোহন দাস।।
।শিক্ষক, চাতলা।

চাতলা হাওরের চারিদিকে চা-বাগান মধ্যে তল অর্থ্যাৎ চা-তল, সেই চা-তল থেকেই সম্ভবত চাতলা নামকরণ হয়েছে। চাতলা হাওরের পূর্বে শিলকুড়ি, পশ্চিমে রোজকান্দি, নোনাপানি, দক্ষিণে বড়জালেঙ্গা ও উত্তরে বোরাখাই চা-বাগান অবস্থিত। এই চাতলা পরগণা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। ধোয়ারবন্ধ থেকে শিলচর পর্যন্ত। কিন্তু আসল চাতলা হাওর যাকে বলা হয় বা হাওরের নিজস্ব এলাকা বলতে বড়জালেঙ্গা থেকে চেংকুড়ি-বোরাখাই পর্যন্ত ধরা হয়। হাওরের নীচু এলাকায় প্রধানত কৈবর্ত সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে। এখানে প্রায় ২০/২৫টি গ্রাম আছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে প্রায় ১২হাজার একরেরও বেশী জমিতে বোরধানের চাষ করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতি বৎসরই কোন না কোন কারনে বোর ধানের ক্ষতি হয়। যেমন খরা, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও বিভিন্ন প্রকার পোকার আক্রমণ। যে সময়ে বোরধান কাটা হয় সেই সময় ঝড়-বৃষ্টির সময়। নীচু এলাকায় ধানের চাষ করা হয় তাই চতুর্দিকে উঁচু যায়গা থেকে জল বিভিন্ন নালা দিয়ে হাওরে জমে যায় এবং ধানের জমি ডুবিয়ে ফেলে। জল নিষ্কাশনের বিজ্ঞানসম্মত কোন ব্যবস্থা না থাকায় এরকম হয়। প্রায় ২০/২৫টি নালা দিয়ে জল চাতলাতে নেমে আসে আর একমাত্র ঘাঘরা নদী দিয়ে বরাক নদীতে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ঘাঘরা নদীতে বড় বড় পাথর আটকে রয়েছে যার জন্য জল দ্রুত গতিতে যেতে না পেরে চাতলার ধানের জমি ডুবিয়ে ফেলে তখন চাষিদের আর কিছু করার থাকে না। অনেকেই মাছ ধরায় লেগে যায়। যাদের সামর্থ নেই তারা প্রতিদিন শিলচর শহরে গিয়ে দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। মিশরকে যেমন নীল নদের দু:খ বলা হয় তেমনি চাতলাকেও ঘাঘরা নদীর দু:খ বলা যেতে পারে! সরকার বালিছরি নদী সহ ঘাঘরাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে খনন করার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করলে জল নিষ্কাশনের সুরাহা হবে এবং বন্যার কবল থেকে বোরধানকে রক্ষা করে স্থানীয় কৈবর্ত চাষিদের নি:স্ব হওয়া থেকে বাঁচানো যাবে।
            চাতলা হাওরে বাঘমারা, হরিনগর, বৈরাগীটিলা, হরিণটিলা, শ্যামপুর, রাজপুর, সিঙ্গারিটিলা ও রতনপুর সহ প্রায় পঁচিশটি গ্রামে শুধু কৈবর্ত সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে আসছে। শিক্ষার দিক দিয়ে অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া এই তপশীল সম্প্রদায় অধ্যূষিত অঞ্চলে শিক্ষার ব্যবস্থা বলতে শুধু বাঘমারায় ‘চাতলা জনতা এম.ই. স্কুল’ ও রাজপুরে ‘রাজপুর এম.ই. স্কুল‌’ই আছে। ২৫টি গ্রামের মধ্যে মাত্র ১০টি এল.পি. স্কুল আছে। বর্তমানে আরও ৪টি এল.পি. স্কুল সরকারি অনুদান পাওয়ার পথে। এই স্কুলগুলি আবার বর্তমান যুগেও একজন শিক্ষকদ্বারা পরিচালিত অথচ প্রতিটি স্কুলেই ক’মান সহ ৬টি শ্রেণী। এই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার মান কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। রাজপুর এবং বাঘমারা গ্রামে ২টি জরাজীর্ণ ভেঞ্চার হাইস্কুল আছে। দীর্ঘদিন থেকে সরকারি অনুদান বা স্বীকৃতি না পেয়ে অনেক শিক্ষক কিছুদিন কাজ করে স্কুল ছেড়ে চলে যান। এই এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত মাসিক বেতন দেবার সামর্থ নেই। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এত খারাপ ষে পিতা-মাতার কাছে বেতনের টাকা চাইলে ছাত্র-ছাত্রীর পড়াই বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় এই তপশীল এলাকার ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করার আর সুযোগ থাকেনা। যারা সামান্য সচ্ছল তাদের ছেলেমেয়েরা এম.ই. স্কুলের পড়া শেষ করে হয় আইরংমারা নয়ত বোরাখাই হাইস্কুলে (৮/১০ কি.মি. দূর) গিয়ে লেখাপড়া করে এবং তুলনামূলক কম মার্কস্ পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়না। যারা একটু ভালভাবে পাশ করে তারা শিলচরের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয় নয়ত বড়জালেঙ্গা উচ্চতর মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়। স্নাতক স্তরে পড়াশোনার জন্য শিলচর গিয়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকতে হয় যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অনেকেই বাড়ি থেকে যাওয়া আসা করে পড়তে গিয়ে মাঝ পথে পড়াই ছেড়ে দেয় আর্থিক অনটনের জন্য। চাতলা হাওরের জনসখ্যার মাত্র ২% মাধ্যমিক পাশ। হাজারে ২/৩ জন উচ্চতর মাধ্যমিক পাশ। স্নাতক উত্তীর্ণ প্রায় নেই বললেই চলে। এত কষ্ট করেও যারা পাশ করে তাদের সরকারি চাকুরি জুটেনা মার্কস্ কম থাকায়। বর্তমানে সরকারি আইনের কড়াকড়ির ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে এই অঞ্চলের পড়ুয়ারা চাকুরি পাবেনা কারন টেট অর্থাৎ ‘শিক্ষক নিরুপন যোগ্যতা’ নেই। ৫০% নম্বর নিয়ে কেউই পাশ করতে পারেনা। এই অঞ্চলে সরকারি চাকুরিয়ান বলতে যারা ভেঞ্চার স্কুল স্থাপন করে নিজেরা শ্রমদান করে স্কুল গ্রাণ্ট করেছেন সেই হাতেগুনা কয়েকজন স্কুল শিক্ষক আর বর্তমানে কিছু অঙ্গনওয়াড়ী ওয়ার্কার ও হেল্পার ছাড়া অন্য চাকুরিয়ান কেউ প্রায় নাই।
            যে সকল ছেলে-মেয়ে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে চাকরি পায়নি তাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়, কারণ তারা কৃষিকাজ, মাছধরা বা অন্যের বাড়ির কোন কাজ করতে কুণ্ঠাবোধ করে। পরিতাপের বিষয় যারা কষ্ট করে করে লেখপড়া করে তাদের যে কত গঞ্জনা সহ্য করতে হয় তা বলে শেষ করা যাবেনা। এই অবস্থা দেখে সাধারণ গরীব লোকেরা তাদের ছেলে মেয়েদের আর পড়াতে চায় না। লেখাপড়া করে বেকার থাকবে অথচ কোন কাজ তাদের দ্বারা করানো যাবেনা এই ভয়ে পিতা-মাতা অনেক কে ছোট থাকতেই কোন না কোন কাজে লাগিয়ে দেয়। যতদিন পর্যন্ত মানুষের এই মানসিকতার পরিবর্তন না হবে ততদিন পর্যন্ত সর্বশিক্ষা, Right to Education, Adult Education, Non-formal Education আরও কত Education Scheme চালু করলেও গ্রামীণ জনগণের করুণ অবস্থা ফেরানো যাবেনা। বর্তমানে যা পরিলক্ষিত হয়, যারা উচ্চপদে চাকরি করেন বা বড় ব্যবসা করেন তাদের ছেলে-মেয়েরাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে। গরীবের কথা বিশেষভাবে কেউ চিন্তা করে না। দেশের ৮০% মানুষই গ্রামে বাস করে অথচ তাদের তেমন বিশেষ সুযোগ সুবিধা করে দিতে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেনা।
******
প্রতাপ -সমাজ ও সাহিত্যের প্রতিভাস
পূজা সংখ্যা-১৪২১, পৃষ্টা সংখ্যা ৮-৯

শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪

শারদীয়
















।। দেবলীনা সেনগুপ্ত।।






ই ছেলেটা, কী করছিস্‌?
সারাদিন শুধু বই পড়ছিস?
মা বলেছে? বলুক না
তাই বলে তুই দেখবি না?
কেমন করে নীল আকাশে
শরত আঁকে আলপনা-
মিলিয়ে তোর কল্পনা
আর নানারকম জল্পনা-
মা তো এখন রান্নাঘরে
বাবাও গেছেন অফিস চলে
পড়ার ঘরের জানলা দুটো
ফাঁক করে দেখ দেখতে পাবি
শিউলি রঙ ফ্রকটি পরে
আমিও হেথা দাঁড়িয়ে আছি।
থাক না লেখা থাক না পড়া
চল না ভাঙ্গি নিষেধ- বেড়া
তোতে আর আমায় মিলে
পুজো- পুজো এই সকালে..

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার ও মন্দির ভাঙার প্রশ্নে

দৈনিক যুগশঙ্খের ২ অক্টোবর, ২০১৪ সংখ্যায় অতীন দাশের “দুর্গাপুজোয় মনকে যা নিয়তই পীড়িত করে” শির্ষক লেখাটি পড়লাম। এই লেখার মূল বক্তব্যকে সম্পূর্ণ খণ্ডন করে এক বিস্তৃত আলোচনা করা যায়। কিন্তু পাঠক যাতে তাঁর নিজস্ব মতামত নিজেই গড়ে তুলতে সচেষ্ট হোন শুধুমাত্র সেই উদ্দেশ্য থেকে উক্ত নিবন্ধে উল্লিখিত দুটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করতেই এই পত্রের অবতারণা। লেখক ইসলাম ও ইসলামের বিস্তৃতি নিয়ে তলোয়ার অর্থাৎ বলপ্রয়োগের তত্ত্বের আশ্রয় নিয়েছেন। সাধারণ পাঠকের কাছে এধরনের সোজাসাপটা জবাব প্রায়শই গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু বিদ্বৎ সমাজের কাছে এধরনের অতি-সরলীকরণ বহু আগেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। উপরন্তু তথ্য নিজে থেকে কোন কথাই বলে না – তথ্য থেকে সত্যকে সমাজবিদ্যার বিশ্লেষণী অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বের করে নিতে হয়। সামাজিক তথ্যের বিশ্লেষণের মাধ্যমে আবিষ্কৃত সত্য জানার জন্য আমাদেরকে স্বীকৃত ও দক্ষ সমাজবিদ তথা ইতিহাসবিদদের কাছে আশ্রয় নিতে হয়। প্রাচ্যের প্রাচীন ইতিহাসের যে তথ্যের ভাণ্ডার সন্নিবিষ্ট হয়েছে তা সাধারণত করেছেন পরিব্রাজকরা যাদের প্রয়োজন পড়ত প্রাতিষ্ঠানিক মদত। যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আধিপত্য বিস্তৃতি লাভ করছে এবং ফরাসী আধিপত্য পতনোন্মুখ সেই সময়কালে প্রাচ্যবিদ্যা চর্চা শুরু হয় ও তা প্রভাব বিস্তার করে। তখনকার লেখায় সন্নিবিষ্ট তথ্য থেকে প্রাচ্যবিদ ও পরিব্রাজকরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তা সাধারণত এই দুই সাম্রাজ্যের স্বার্থের অনুকূল। তাঁরা সবসময়ই প্রাচ্যকে দেখেছেন পাশ্চাত্যের চোখ দিয়ে। এডোয়ার্ড স্যাইডের ‘অরিয়েন্টেলিজম’ বইয়ে এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ভারত-চীন ও আরব দুনিয়া একই ভ্রান্তির শিকার।

           যাইহোক, একেবারে নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও ৫৭১ সালকে প্রফেট মহম্মদের জন্ম সাল হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে। এই সময়কাল আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই সময়ে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য পশ্চিমদিকে পরাজয় বরণ করছে ও পূর্বে প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতালি ও স্পেনে যথাক্রমে লম্বার্ড ও ভিসিগথদের আক্রমণ এগিয়ে চলেছে, পূর্বে বাইজেন্টাইনরা শুধুমাত্র কূটনৈতিক রণনীতি অবলম্বন করে চলেছে। দক্ষিণ আরবে প্রথমে ইথিওপিয়ানদের ও পরে পার্সিয়ানদের দখলের মাধ্যমে ক্ষমতার পতন পূর্বেই শুরু হয়েছে। খ্রিষ্টিয়ান যুগের শুরুতেই মৌসুমী বায়ুর নিয়ম আবিষ্কারের মাধ্যমে গ্রিক জাহাজ মিশর থেকে ভারত যাতায়াত শুরু করে দিয়েছে। ব্যাপক দূরপাল্লার বাণিজ্যের মাধ্যমে বাণিজ্য শহর গড়ে উঠছে। দক্ষিণ আরব ও বাইজেন্টাইন পেলেস্তাইনের মাঝখানে অন্যতম বর্ধিষ্ণু শহর হিসেবে গড়ে উঠছে মক্কা। সম্ভবত মক্কার ভৌগোলিক অবস্থান এই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে – পেলেস্তাইন থেকে ইয়েমেনে যাওয়ার পথ, পূর্ব থেকে পশ্চিমে লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগর হয়ে ইথিওপিয়া যাওয়ার পথে অবস্থিত এই মক্কা। অনুরূপ আর্থিক বিকাশ ঘটছে গোটা পশ্চিম আরবে। পুরোনো বেদুইন ট্রাইবরা তখনও স্থায়ী বসত গড়ে তুলেনি। বাণিজ্য অর্থনীতি ও শহরের বিকাশ তাদের মধ্যেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। অভ্যন্তরিণ জনজাতীয় সামাজিক কাঠামোয় অসাম্যের ছায়া পড়তে শুরু করেছে। বাণিজ্য শহরের প্রভাবে অভ্যন্তরিণ সামাজিক ও আর্থিক কাঠামোর পরিবর্তন জনজাতীয় জীবনধারণের নিয়মের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। বৃহৎ সাম্রাজ্যের কাছে আরবরা সবসময়ই প্রয়োজনীয় ছিল – তাদের আনুগত্য তারা কিনে নিত, এক ট্রাইবের বিরুদ্ধে আরেকটিকে লেলিয়ে দিত। সুতরাং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের সাথে পেতে হলে প্রয়োজন ছিল একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া যা সকল আরববাসীদেরকে ঐক্যবদ্ধ করবে। এই রাষ্ট্র গঠনের অনুকূল মতাদর্শ হিসেবে খ্রিষ্ট ও ইহুদী ধর্ম আরববাসীদের কাছে পরিচিত ছিল। কিন্তু এই দুটি ধর্মই তাদের কাছে বিদেশি ও বৃহৎ সাম্রাজ্যরে ধর্ম ছিল এবং তাই এ ধর্ম গ্রহণ আরব গরিমায় আঘাত করত বলেই জনজাতীয় ধর্ম ত্যাগ করে তারা ঐ সাধারণ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট হলো না। উপরন্তু প্রায় এই একই সময়ে ইসলাম ধর্ম জন্ম নিচ্ছে, অন্যথায় সাম্রাজ্যের ধর্মই হয়ত আরবে প্রভাব বিস্তার করত ও ইতিহাস ভিন্ন হত। আরবের সবচাইতে প্রাধাণ্যকারী কুরেশ জনজাতীয়রা তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল ও নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকলেও খ্রিষ্টীয়, বাইজেন্টাইন ও ইথিওপিয়ার ক্ষমতার সামনে তারা ঐক্যবদ্ধ থাকত, যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিত ও সাম্রাজ্যগুলির নিজেদের মধ্যে সংঘাতে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে সমদূরত্ব বজায় রাখত। এই কুরেশিরা পার্শিয়া, ইথিওপিয়া, সিরিয়া ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়ে ও তাদের বসতি থাকা শহরগুলির প্রভূত বাণিজ্যিক উন্নতি সাধন করে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভূমিকা নেয়। প্রফেট মুহম্মদ এই কুরেশি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং এক শক্তিশালী আরব রাষ্ট্রের অনুকূল একেশ্বরবাদী ইসলাম ধর্ম গড়ে তোলেন। সমস্ত ট্রাইব, আরব ইহুদীদের এই নতুন ধর্মে আকৃষ্ট করার জন্য জনজাতীয় ও আরব ইহুদি রীতি নীতির অনেক কিছুই ইসলাম ধর্মে সন্নিবিষ্ট করেন। মেদিনাতে ভ্রূণস্তরে যে রাষ্ট্র ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে প্রফেট মুহম্মদ তাতে সুস্থিতি কায়েম করেন। গোটা আরব ইসলাম ধর্মে অন্তর্ভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও তার চরিত্র মাল্টি-এথনিক থেকে যায় এবং এই মাল্টি-এথনিক বিভাজনের সীমানা ধরেই আরব রাষ্ট্র তথা অটোমান সাম্রাজ্যকে বহু-রাষ্ট্রে বিভাজিত করা হয়। প্রফেট মহম্মদের জীবতকালে যে ক্ষুদ্র আরব রাষ্ট্রের জন্ম হয় তা পরবর্তীতে বিকশিত হতে থাকে। পার্শিয়ান, সিরিয়ান, ইজিপ্সিয়ান, গ্রীক ইত্যদি অনেকেই আরব হয়ে উঠে। অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য, বিদ্বৎ সমাজে স্বীকৃত ও বিশ্লেষণাত্মক বই ‘মুহম্মদ’-এর লেখক ম্যাক্সিম রডিনসন লিখেছেন ইউরোপীয়রা যেভাবে বিশ্বাস করে আরব শাসকরা সেভাবে বলপ্রয়োগে ধর্মান্তরিত তো করতেনই না, বরঞ্চ এধরনের ধর্মান্তরণকে নাকচ করতেন। ভারতে ইসলামের এক ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও কাহিনী রয়েছে। কিন্তু প্রাচ্যের ইতিহাসকে ইউরোপীয়দের চোখে না দেখার অভ্যাস করাই আমাদের সবার জন্য মঙ্গল। কিন্তু তাই বলে বলপ্রয়োগের গঠনাকে একেবারে নাকচ করা যায় না। উমাইয়াদদের রাজত্বে কিছু ক্রিষ্টিয়ান ও ইহুদিদের চাবুক মেরে ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল। অথচ কুরেশি রাজত্বে এই উমাইয়াদ বংশের আবু সুফিয়ান কুরেশ শাসকদের বিরোধিতায় ইসলামকেও ঘৃণা করতেন ও এদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। ধর্মান্তরিত করার এধরনের ঘটনার উল্লেখের মাধ্যমে ইসলামের অগ্রগতিকে ব্যাখ্যা করা যায় না। মূল আরবদের অবদানের সাথে সাথে মুসলিমদের মধ্যে যারা আরব পরিচিতি লাভ করেছিল, কিন্তু আরব শাসনের অধীনে পুরোপুরি চলে যায়নি তাদের মধ্য থেকেও মুসলিম আর্টস, মুসলিম সায়েন্স, মুসলিম ফিলোজফি ইত্যাদি বিকশিত হয়েছে। এক দীর্ঘ পরিক্রমায় ইসলাম ধর্মেও অনেক রীতি-নীতি ও মতধারা সংযোজিত হয়েছে। আধুনিক বিশ্বে তেল সম্পদ লুটের জন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে পশ্চিমী রাষ্ট্র শক্তির চক্রান্ত, অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুসলিমদের বিদ্রোহের ন্যায্যতা নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখা উচিত যে এই বিদ্রোহের আড়ালে এই পশ্চিমী রাষ্ট্রশক্তিই তাদের নিজস্ব স্বার্থেই ওয়াহাবি সালাফিপন্থীদের সবচাইতে প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনীকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে মদত যুগিয়ে যাচ্ছে। আলটপকা মন্তব্য দিয়ে ইসলামের ইতিহাসের বিকৃতি আগ্রাসী পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদকেই পরোক্ষে নিজের অজান্তে মদত যোগায়।

            এবার আসা যাক বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার ও মন্দির ভাঙার প্রশ্নে। যে কোন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিই সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার ও মন্দির ভাঙার ঘটনাকে নিন্দাই শুধু করবেন না, ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের পক্ষেও মত পোষণ করবেন। কিন্তু ঘটনার বিশ্লেষণ নির্মোহ, নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান থেকে করাটাই বাঞ্চনীয়, অন্যথায় সঠিক অবস্থান নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সাধারণকে প্ররোচিত করতে পারে। এই অত্যাচার ও মন্দির ভাঙার ঘটনাগুলি যে ইসলামি নেতা দিলওয়ার হোসেন সায়েদির ফাঁসির পর থেকে ঘটতে শুরু করেছে লেখক একথা উল্লেখ করেছেন। এই ফাঁসিটা কে দিল? নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র এবং ফাঁসি দেওয়ার পেছনে ছিল বাংলাদেশের জনমতের চাপ। এই তথ্য থেকে কী একথা বলা যায় না যে অত্যাচার ও মন্দির ভাঙার ঘটনাগুলির সাথে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহদাংশের সমর্থন নেই? এমতাবস্থায় বাংলাদেশের হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার প্রশ্ন কী করে উঠে? উপরন্তু মন্দির ভাঙার ঘটনাগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে এই ঘটনাগুলি মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। বাংলাদেশে এবার রেকর্ড সংখ্যক দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হওয়ার তথ্য কি হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার বার্তা বহন করে? বাংলাদেশ থেকে গণহারে হিন্দুদের তাড়িয়ে দিলে আসামে হিন্দু জনসংখ্যা কি অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়ত না? যে কোন সামাজিক সংঘাতের ঘটনায় রাষ্ট্র কী ভূমিকা নেয় তা অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। রাষ্ট্র জড়িত থাকলে অত্যাচারের ঘটনা বিশ্ববাসীর জনসমক্ষে আসা দুরূহ হয়ে উঠে। উল্টোদিকে রাষ্ট্র সদর্থক ভূমিকা নিলে সামাজিক বিবাদের নিষ্পত্তি বহু ক্ষেত্রে আঞ্চলিক স্তরেই হয়ে যায়। অযোধ্যাবাসীর উপর ছেড়ে দিলে বাবরি মসজিদ বিবাদের নিষ্পত্তি তাঁরাই করে নিতেন বলে আমার বিশ্বাস, এতো পাশবিক আস্ফালন ও রক্তক্ষরণের প্রয়োজন পড়ত না। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় তামিলদের উপর বর্বরোচিত আক্রমণের ঘটনা নিয়ে বিশ্ববাসী এখনো অন্ধকারে। অন্যায়ের বিরোধিতা ও প্রতিরোধ করার অর্থ এই নয় যে ন্যায়ের সম্ভাবনাকেও সমূলে নাকচ করে দিতে হবে। বাংলাদেশের সমাজে সেক্যুলার মূল্যবোধ অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। যেভাবে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির সেক্যুলার চর্চা বাংলাদেশে ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে তার সাংস্কৃতিক মূল্য বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে হলেও সমাজ বহন করবে ও তাকে পরাজিত হতে দেবে না বলেই আমার বিশ্বাস। ভারতবর্ষে গণতন্ত্র ও সেক্যুলার রাজনীতির পরোক্ষ প্রভাবও বাংলাদেশে পড়তে বাধ্য, এক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব অপরিসীম।

বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৪

এপার-ওপার

(C)Image:ছবি

।।মিফতাহ উদ-দ্বীন।।
সরের নামাজ শেষ। কেউ নিজের বাড়িতে, কেউ স্থানীয় বাজারের দিকে আর কেউ বা নিজের ছোট্ট ক্ষেতের জমিতে। আলো আধারের এক সংক্ষিপ্ত কুশল বিনিময়। দিন তাঁর সমস্ত ক্লান্তি মুছে ধীরে ধীরে ছুটছে রাতের দিকে আর রাত এগিয়ে আসছে দিনকে আলিঙ্গন করতে। এক সংক্ষিপ্ত অথচ এক নিবিড় আলিঙ্গন। দুজনেরই মুখে এক অনাবিল হাসি। আপন প্রভুর হুকুম পালন করতে পেরে যেন কৃতজ্ঞতায় নত দুজনই।

             কচিকাঁচারা নানান রকমের গ্রাম্য খেলায় মত্ত। ঠিক তখনই মসজিদ থেকে ভেসে আসে ইমাম সাহেবের শান্ত, গম্ভীর কন্ঠ। মবারকপুর নিবাসী অমুকের মেয়ে অমুক ইন্তেকাল করেছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।!!
          মিনিট দুয়েকের জন্য জীবন থেমে যায় আমাদের ছোট্ট গ্রামে। আর তারপরই ছোটরা আবার ও ফিরে যায় নিজ নিজ খেলায়। ক্ষেতে থাকা মানুষটি ভালো করে পেঁচিয়ে দেয় বাড়ন্ত লতা টিকে বাঁশের ডালে। চাল নুন নিয়ে তাড়াহুড়ো কারুর। মাগরিবের সময় হয়ে এলো বলে।

           মাগরিবের নামাজ শেষে ওদের বাড়ি হয়ে এলাম। মৃতের বাবা আমার সম্পর্কিত ভাই। সেই হিসেবে মেয়েটি আমার ভাতিজি। আমার মায়ের ছাত্রী। বয়স পঁচিশ/ছাব্বিশ হবে। তিন বছরের একটা ছোট্ট ছেলে ও আছে শুনলাম। ক’মাস আগে গিয়েছিলাম খবরাদি নিতে মসজিদের এক সাথীকে নিয়ে। তখনই শুনতে পেলাম মেয়েটির ক্যান্সার হয়েছে। ওই দুঃখী পিতাটি আমাকে দেখে আরও দুঃখী হয়ে গেলেন। আমার বোনের কথা ওঠালেন। আর তারপর দুজনই কিছুক্ষণ বোবা হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।

ফেরার পথে বুক ভারী হয়ে এলো। মসজিদের পাশের কবরী স্থানে এসে আর ধরে রাখা গেল না। অঝোরে পানি ঝরিয়ে পড়লো দু গাল বেয়ে। হাত ওঠালাম আমার রবের কাছে। আর একে একে সব কবরবাসীর কথা মনে পড়তে থাকলো। আমার বোন, আমার দাদা, আমার দাদী, চাচা, ফুফু আর গ্রামের আরও অনেকের। এ এক অকৃত্রিম অনুভুতি, এক অকৃত্রিম চাওয়া। আমি, আমরা, আমরা সবাই একদিন চলে যাবো। কেউই থাকবো না। বাকি থাকবেন শুধু তিনি, মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ।

২০/১০/২০১৪

শারদ-সুন্দরী





(C)Image:ছবি














।। দেবলীনা সেনগুপ্ত।।




ই শরতদিনে
স্নান করে শারদশিশিরে
নীলাম্বরে দেহ ঢাকো
হে শরতবালিকে
মেঘরং কাশ ও
শেফালির আলাপনে
ভরে যাক বুকের আঁচল
ভ্রূ-ভঙ্গিমা ভেঙ্গে
ললাটাকাশে
সূর্যতিলক উজ্জ্বল
খুলে দিক তৃতীয় নয়ন...
পড়ে থাক  নিছক রূপটান
শরতের সুধা নিয়ে
দেহমন্দিরে
বাজুক রূপগান ।